Job

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা শীর্ষক একটি রচনা লিখুন।

Created: 1 year ago | Updated: 8 months ago

বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতিকে তথ্যপ্রযুক্তির অর্থনীতি বললে খুব একটা বাড়িয়ে বলা হয় না। এখানে রাষ্ট্র, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা একই তথ্য-সূত্রে গ্রথিত। একই হার্ডওয়ার ও সফটওয়ারে ধারণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে অর্থনীতির মূল উপাদানগুলোকে। বিশ্বের প্রধান প্রধান অর্থনীতির দিকে তাকালে তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশও ধীরে ধীরে তথ্যপ্রযুক্তির অনেক পথ পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্রিয়া-কর্মকে ধারণ করা হচ্ছে সফটওয়ারের সূক্ষ্মতন্ত্রে। এ ব্যাপারে অগ্রগতিও আশাপ্রদ। তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের কৃতী সন্তানরা দেশে-বিদেশে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। 

সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। রূপকল্প বা ভিশন ২০২১ গ্রহণ করা হয়েছে, যার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ও কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বা প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচনে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে প্রযুক্তি ব্যবহারের আধুনিক দর্শন উপস্থাপন রূপকল্পের একটি বিশেষ দিক। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত ডিজিটাল রূপান্তর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক যোগাযোগ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। 

তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) মূল চালিকা শক্তি হল ইন্টারনেট, যা বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ামক। অন্য কথায় বর্তমান বিশ্ব অর্থ- ব্যবস্থাকে ইন্টারনেট অর্থনীতিও বলা হয়ে থাকে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বাভাবিক গতিশীলতার চেয়ে বহুগুণে বেশি ও ব্যাপক ক্রিয়াকর্মের সমাধান দেয়া সম্ভব হচ্ছে। বিপুল তথ্য-পরিসংখ্যানকে সমবেত করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব করে তুলছে। ইন্টারনেট অর্থনীতি বা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিতে প্রাইভেট ও পাবলিক সেক্টরের মধ্যে অসামঞ্জস্যগুলোর হ্রাস করা সহজ হয়েছে। পৃথিবীর বড় বড় প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি তাদের কর্পোরেট উৎপাদনশীলতা, উপার্জন বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে অধিক কর প্রদানেরও নিশ্চয়তা দিতে পারছে। এ ধরনের অর্থনীতির দক্ষ মানব সম্পদ উৎপানশীলতা বাড়ানোর সহায়ক হয়েছে। সরকারের আয় বাড়াতে তা ভূমিকা রাখছে। আর আয় বৃদ্ধি হলে তা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা এবং সমাজের বৈষম্য দূর করা সম্ভব হয়। এভাবে আইটি অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে পাবলিক ও প্রাইভেট উভয় সেক্টরের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পাচ্ছে এবং উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। তবে এটা কেবলমাত্র উদার, সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত 'ডিজিটাল অর্থনীতির' মাধ্যমেই সম্ভব। 

ডিজিটাল অর্থনীতিই জাতীয় পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার সম্ভব করে তোলে। বিশ্বব্যাপী অবাধ তথ্য প্রবাহ ভোক্তা, সরবরাহকারী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে তথ্য-সূত্রে গ্রথিত করে। সবাই উপকৃত হয়। বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে যা বিশেষ ভূমিকা রাখে। ই-কমার্স বা ইলেক্ট্রোনিক বাণিজ্যের কারণে অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়। স্বল্প খরচে অধিক সেবাকর্ম পাওয়া যায় বলে সেবাকর্মের চাহিদা বেড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সিস্টেমেরও আয়তন বেড়ে ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে। ইলেক্ট্রোনিক বাণিজ্য বা ই-চ্যানেলে বিক্রয় থেকে যে আয় হয়, তা সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি ব্যয় মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকে। এ লক্ষ্যেই বিছবি, বিংসি, জিংজি, এ২ আই ইত্যাদি ডিজিটাল বা প্রযুক্তিগত ধারণা ও ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র ও দেশ-বিদেশের মধ্যে বহুমুখী সংযোগ স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। 

এ ডিজিটাল অর্থনীতিতে তথ্যপ্রযুক্তি বা ইন্টারনেট ব্যবহারের অনেক কাজ একসঙ্গে সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের হিসাব, লাইসেন্স ফি সংগ্রহ ও মনিটর, অপরাধ চিত্র সংগ্রহ, ভোট গণনা ফলাফল তৈরি, তথ্য প্রেরণ ইত্যাদি অসংখ্য কাজ অতি সহজে করা যাচ্ছে। 

ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সর্বত্রই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ঘরেও এখন ঢুকে পড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি। ইন্টানেটের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়ে পড়ছে। ই-কর্পোরেশন, ই-কমার্স, ই-মেইল ইত্যাদি এখন আমাদের  যোগাযোগ ও কর্মকাণ্ডকে সহজ করেছে। উন্নত বিশ্বে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে তাদের ব্যবসা রাতারাতি বেড়ে গিয়েছে। এমন ব্যাপক প্রবৃদ্ধি কোনো সময়ই হয়নি বা ছিল না। তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তারা তোতা, ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ গড়ে তুলছে। বিল গেটসের মাইক্রো সফট কোম্পানির বিশ্বজোড়া নাম। বারবার তার সম্পদের পরিমাণ পূর্বের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এভাবে বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যেও চ এসেছে তথ্যপ্রযুক্তির অবদান। সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবসা হচ্ছে। এ প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছার পেছনে তারা একথা ভালোভাবেই জানে যে, মধ্যবিত্ত আর সাধারণ ব্যবহারকারীরাই ব্যবসা- বাণিজ্যের পেছনের আসল শক্তি। তাই কম্পিউটার তথ্যপ্রযুক্তিকে উন্নত বিশ্বে আরও সহজলভ্য করার চেষ্টা চলছে। দাম কমানো হচ্ছে; ব্যবহার ব্যয়ও কমিয়ে একেবারে নাগালের মধ্যে আনা হয়েছে। আর মানুষও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কেননা, সবকিছুই এতে টাটকা পাওয়া যায়। ইন্টারনেটভিত্তিক বাণিজ্যে জনা-বিক্রয়, বিনোদন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদির খবরাখবর জোগান অতীব সহজসাধ্য ও সুবিধাজনক। কাগুজে সংবাদপত্রের চেয়ে এখন অনলাইন খবর সপ্তাহে বেশি বিনোদন, বেশি খবর ও পড়ার সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। 

দেশে দেশে আন্তঃযোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে এখন তথ্যপ্রযুক্তিকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। পারস্পারিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয় এখন বলা যায় পুরোপুরিই তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। ই-কর্পোরেশনের বিজ্ঞাপন চরিত্রও পাল্টিয়ে গিয়েছে। এখন গ্লামারের পরিবর্তে তথ্যকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, দৈনন্দিন জীবনযাপন সব ক্ষেত্রেই আইটি বা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাপক পরিবর্তন আনছে। এর ক্রমবর্ধমান ইতিবাচক ভূমিকা লক্ষণীয়। বলা হচ্ছে, সম্পদের নয়, তথ্যের ব্যবস্থাপনাই হবে একুশ শতকের সৃজনশীল অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ওয়েব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। বোতাম টিপলেই গ্রাহক সব পণ্যের বিশদ বিবরণ জানতে পারছে। আর এ পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে অনেকে। নতুন শতকের অর্থনৈতিক বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করছেন। 

নীতি-নির্ধারক এবং নির্বাহীদের জন্যও নতুন শতক এক সত্যিকার চ্যালেঞ্জ বয়ে নিয়ে আসছে। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি বা ওয়েব ব্যবস্থাপনার কথাই সর্বাগ্রে প্রাধান্য পাচ্ছে। একজন অভিজ্ঞ ম্যানেজার বা নির্বাহীর পূর্বের সব অভিজ্ঞতাই অচল প্রমাণিত হয়েছে। নতুন করে নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল তাকে আয়ত্ত করতে হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার এটাই একমাত্র উপায়। উন্নত বিশ্ব অনেক আগেই তা বুঝতে শিখেছিল। কিন্তু আমরা অনেক বিলম্বে বুঝতে শুরু করেছি। এখানে আরও একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, তথ্যনির্ভর অর্থনীতিতে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা একান্ত জরুরি। যারা যত বেশি সঠিক তথ্যনির্ভর, তাদের তত বেশি অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। একটা তথ্যনির্ভর নেটওয়ার্কের আওতায় ভোক্তা, ক্রেতা, সরবরাহকারী, ডিজাইনার, নির্বাহী, নকশাবিদ, উৎপাদক বা বাজারজাতকারী মোটকথা সবাই একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। কাজ হবে অতি দ্রুত এবং তাৎক্ষণিকভাবে। ফলশ্রুতিতে, অর্থনীতি গতি পাবে, প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ইনটেল কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান এন্ড্রু এস গ্রোভের ভাষায়, কাজের গতি ত্বরান্বিত হয়েছে, তথ্যের গতিপ্রবাহমানতা বেড়েছে। ভবিষ্যতেও এটা বাড়তে থাকবে।' ইন্টারনেটে পরিশেষে, আমাদের অর্থনীতিও ক্রমান্বয়ে তথ্যপ্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে, সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে এবং অপচয় রোধ করতে পারলে আমাদের প্রযুক্তিও সামর্থ্য অর্জন করবে। আমাদের অর্থনীতিও তথ্যপ্রযুক্তির সুফল । পেয়ে সত্যিকার তথ্য প্রযুক্তির অর্থনীতিতে উন্নীত হবে- সে প্রত্যাশা অমূলক নয়।

8 months ago

বাংলা

Please, contribute to add content.
Content

Related Question

View More

একজন লেখক তিনিই যিনি লেখেন। তবে সব লেখা লিখেই লেখক হওয়া যায় না। লেখক সব ধরনের হতে পারে। তবে সৃজনশীল লেখকই হচ্ছে আমাদের মূল কেন্দ্রবিন্দু। লেখক হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম একটি স্বাধীন সত্ত্বা।

একজন লেখক পুরোপুরি তার নিজের সত্ত্বার ওপরে বেঁচে থাকে। অনেকেই লেখক হবার সহজ উপায় খোঁজ করে। কিন্তু পড়তে পড়তে আর লিখতে লিখতেই শুধুমাত্র লেখক হওয়া যায়। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। লেখক অনেক ধরনের হতে পারে।

একজন সাংবাদিকও একজন লেখক। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, ছড়া, সাহিত্য, প্রবন্ধ, রম্য, ব্লগ সব ধরনের লেখা যারা লেখে তারাই লেখক। অনেকেই মস্তিষ্কের মধ্যে ওকটা লেখার শক্তি পেয়ে যায় আর অনেকে হয়ত শিখে শিখে লেখক হয়।

সমাজ সভ্যতা কখনোই পুরোপুরি একজন লেখকের পক্ষে থাকে না। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিপক্ষে চলে যায়। স্বাভাবিকভাবেই একজন লেখক তার কলমের আঘাতে জর্জরিত করতে চায় সকল অন্যায়, অপবাদ। তাই হয়ত বেঁধে যেতে পারে সংঘাত। কলমই হচ্ছে একজন লেখকের দাঁড়ানোর জায়গা। কলম ছাড়া লেখকের অস্তিত্ব বিলীন। তবে সবাইকে যে প্রতিবাদ লিখতে হবে এমন কোনো কথা। কেউ কেউ মনোরঞ্জনের জন্যও লেখে। অনেকে আবার চাটুকারিতা করতে লেখে। কেউ আবার কীভাবে পুরষ্কার তুলে নেওয়া যায় সেই ধান্দা করার জন্য লেখে।

একজন লেখক হয়ে উঠতে পারে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্যকারী। সে কলমের ছোঁয়ায় প্রতিবাদ করতে অন্যায়ের আর ফুটিয়ে তুলবে ন্যায়ের কথা। লেখকের কলমের কালি প্রেরণার সুর হয়ে গান গাইবে। আর অশ্রুসিক্ত নয়নে হাসির ঝলক আনবে লেখকের কলম। একজন লেখকের প্রাণ তার লেখা, তার লেখার ভঙ্গি। সে তার লেখা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে পারবে অসুস্থ কোনো সভ্যতাকে। লেখক তার কলম দিয়ে জাগ্রত করতে পারবে মানুষের ভীতরে লুকিয়ে থাকা অদম্য সাহস।

একজন লেখক কল্পনাকে নিয়ে আসতে পারে বাস্তবে। আমাদের নিয়ে যেতে পারে কল্পনার গহীন বনে। লেখক আমাদের সবাক যুগ থেকে অবাক যুগে নিয়ে যেতে পারে মুহূর্তের মাঝেই। লেখক জাগাতে পারে প্রেম, লেখক জাগাতে পারে নতুন কাজের স্পৃহা।

অনেকেই মনে করে লেখকের সকল বিষয়ে দ্বায় আছে। কিন্তু লেখকের মূলত কারো কাছেই কোনো দ্বায় নেই। তার দ্বায় থাকে শুধু নিজের মনের কাছে, নিজের বিবেকের কাছে, নিজের সুপ্ত চেতনার কাছে। সমাজ কি ভাববে তা নিয়ে লেখক মাথা ঘামাবে না। লেখক ভয়ে নাথা নোয়াবে না। লেখক যতদিন বাঁচবে বীরের মতোই বাঁচবে।

সারা বিশ্বেই লেখকরা নির্যাতনের শিকার হয়। অনেকেই বলে থাকে লিখে কিছুই হয় না। তাই যদি হতো তাহলে লেখার জন্য লেখকের শাস্তি হতো না। লেখকের ফাঁসি হতো না।

লেখকের কলমে অনেক জোর। সেই জোর ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিতে পারে যেকোনো কিছু। বিশেষ করে সাংবাদিকরা বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত হয় অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে। শাস্তি, সাজা বহু কিছু তাদের সহ্য করতে হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখলে হুমকি আসে, হামলা মামলা বহু ঘটনাই ঘটে। কারণ শাসক, শোষক আর অন্যায়কারীদের অনেক ক্ষমতা। লেখকের সমাজের দায়মুক্তির জন্য জীবনও দিতে হয়। তাইতো একজন লেখক সমাজের শক্তি, সমাজের সম্পদ।

1 year ago

সাহিত্য হচ্ছে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি তথা মানব-অভিজ্ঞতার কথা বা শব্দের বাঁধনে নির্মিত নান্দনিক বহিঃপ্রকাশ। এই অর্থে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি উচ্চতর গুণাবলি সমন্বিত বিশেষ ধরনের সৃজনশীল মহত্তম শিল্পকর্ম। সাহিত্য-শিল্পীগণ যখন ‘অন্তর হতে বচন আহরণ’ করে আত্মপ্রকাশ কলায় ‘গীতরস ধারা’য় সিঞ্চন করে ‘আনন্দলোকে’ নিজের কথা- পরের কথা- বাইরের জগতের কথা আত্মগত উপলব্ধির রসে প্রকাশ করেন- তখনই তা হয়ে ওঠে সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের কথায় “বহিঃপ্রকৃতি এবং মানব-চরিত্র মানুষের মধ্যে অনুক্ষণ যে আকার ধারণ করিতেছে, যে-সঙ্গীত ধ্বনিত করিয়া তুলিতেছে, ভাষা-রচিত সেই চিত্র এবং সেই গানই সাহিত্য।…সাধারণের জিনিসকে বিশেষভাবে নিজের করিয়া – সেই উপায়ে তাহাকে পুনরায় বিশেষভাবে সাধারণের করিয়া তোলাই হচ্ছে সাহিত্যের কাজ।” [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাহিত্য] সাহিত্য সত্য-সুন্দরের প্রকাশ হিসেবে প্রবহমাণ সময়ে যা ঘটে – সে-সবের মধ্য থেকে যা মহৎ, যা বস্তুসীমাকে ছাড়িয়ে বাস্তবাতীত প্রকাশ করে, যা জীবনের জন্য কল্যাণময় এবং মহৎ আদর্শের দ্যোতক তাকেই প্রকাশ করে। আসলে মহৎ সাহিত্য তাই- যা একাধারে সমসাময়িক-শাশ্বত-যুগধর্মী-যুগোপযোগী-যুগোত্তীর্ণ। সাহিত্য কেবল পাঠককে আনন্দ দেয় না- সমানভাবে প্রভাবিত করে পাঠক এবং সমাজকে।

আভিধানিকভাবে ‘সহিতের ভাব’ বা ‘মিলন’ অর্থে ‘সাহিত্য’ হলো কাব্য, নাটক, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি সৃজনশিল্পের মাধ্যমে এক হৃদয়ের সঙ্গে অন্য হৃদয়ের সংযোগ স্থাপন; সাহিত্য¯্রষ্টা-সাহিত্যের সাথে পাঠকের এক সানুরাগ বিনিময়। কিন্তু আভিধানিক অর্থের নির্দিষ্ট সীমায় সাহিত্যের স্বরূপ-গতি-প্রকৃতি-বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতির সম্যক ধারণা দেওয়া যেমন অসম্ভব, কোনো বিশেষ সংজ্ঞায় তাকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়াও তেমন দুঃসাধ্য। বাচ্যার্থ ও ব্যঞ্জনার্থর সীমাকে অতিক্রম করে নানা রূপে, রসে, প্রকরণ ও শৈলীতে সাহিত্যের নিরন্তর যাত্রা সীমা থেকে অসীমে। প্রত্যক্ষ সমাজপরিবেশ তথা সমকালীন বাস্তব পারিপার্শ্বিক, নিসর্গপ্রীতি ও মহাবিশ্বলোকের বৃহৎ-উদার পরিসরে ব্যক্তিচৈতন্য ও কল্পনার অন্বেষণ ও মুক্তি- আর এইভাবেই শ্রেণিবিভাজন, নামকরণ ও স্বরূপমীমাংসার প্রচেষ্টাকে ছাপিয়ে উঠে সাহিত্যের যাত্রা সীমাহীনতায়। প্রকৃত সাহিত্য তাই যেমন তার সমসময় যা যুগমুহূর্তের, তেমনই তা সর্বকালের সর্বজনের। মার্কসবাদী সাহিত্যতত্ত্বে বাস্তব সমাজজীবনকে ‘ভিত্তি’ আর শিল্প-সাহিত্যকে সমাজের উপরিকাঠামোর [ঝঁঢ়বৎংঃৎঁপঃঁৎব] অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। সাহিত্যের মৌল উপকরণসামগ্রী আহৃত হয় জীবনের ভা-ার থেকে- সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বৈরিতার বিচিত্র-অনিঃশেষ ভা-ার থেকে। সাহিত্যসৃষ্টির মূলে সক্রিয় যে সৃজনী-ব্যক্তিত্ব তা নিছক বিমূর্ত কোনো সত্তা নয়; আত্মপ্রকাশ ও মানবিক সংযোগ ও বিনিময়ের বাসনায় অনুপ্রাণিত সে সত্তা তার ভাব-ভাবনা, বোধ ও বিশ্বাসকে এক আশ্চর্য কৌশলে প্রকাশ করে জনসমক্ষে কোনো একটি বিশেষ রূপ-রীতি-নীতির আশ্রয়ে। ব্যক্তিক অনুুভূতি-যাপিতজীবন-মিশ্রকল্পনার জগৎ থেকেই সৃষ্টি হয় সাহিত্যের; যুগান্তরের আলোকবর্তিকা হিসেবে সাহিত্য সত্যের পথে সবসময় মাথা উঁচু করে থেকেছে- সত্যকে সন্ধান করেছে। আসলে সাহিত্য এমনি এক দর্পণ- যাতে প্রতিবিম্বিত হয় মানবজীবন, জীবনের চলচ্ছবি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, সমাজজীবনে ঘটমান ইতিহাস- ইতিহাসের চোরাস্রােত নানাবিধ কৌণিক সূক্ষ্মতায়।

সাধারণত আত্মপ্রকাশের বাসনা, সমাজ-সত্তার সঙ্গে সংযোগ কামনা, অভিজ্ঞতার আলোয় কল্পলোক নির্মাণ এবং রূপপ্রিয়তা- এই চতুর্মাত্রিক প্রবণতাই মানুষের সাহিত্য-সাধনার মৌল-উৎস। চতুর্মাত্রিক প্রবণতার [আত্মপ্রকাশের কামনা, পারিপার্শ্বিকের সাথে যোগাযোগ বা মিলনের কামনা, কল্প-জগতের প্রয়োজনীয়তা এবং সৌন্দর্য-সৃষ্টির আকাক্সক্ষা বা রূপমুগ্ধতা] মধ্যে সমাজসত্তার সঙ্গে সংযোগ-কামনা এবং অভিজ্ঞতার আলোয় কল্পলোক নির্মাণ- এই উৎসদ্বয়ের মধ্যে নিহিত রয়েছে সাহিত্য ও সমাজের মধ্যে আন্তর-সম্পর্কের প্রাণ-বীজ। সমাজ শিল্পীকে সাহিত্য-সাধনায় প্রণোদিত করে। ‘সহৃদয়-হৃদয় সংবাদ’এর মাধ্যমে সাহিত্যিকগণ লেখক-পাঠকের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেন- উভয়ের হৃদয়বীণার তারগুলোকে একই সুতায় গেঁথে দেন। এর কারণে সাহিত্য দেশ-কাল-সমাজের সীমা অতিক্রম করে সর্বসাধারণের হৃদয়কে আকর্ষণ করে। এর ফলে সাহিত্য হয়ে ওঠে সার্বজনীন-সর্বকালের মানুষের হৃদয়ের সামগ্রী এবং সাহিত্য¯্রষ্টাও হয়ে ওঠেন অনেক বড়। কিন্তু বর্তমান বাংলা সাহিত্যচর্চার গতি-প্রকৃতি, সমস্যা-সংকট-সমাধান কোন দিকে? এসব বিষয়ের সন্ধান- এ প্রবন্ধের অন্বিষ্ট।

1 year ago

আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধটি আমাদের লোককৃষ্টি গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে। লেখক এ প্রবন্ধে বাংলাদেশের লোকশিল্প ও লোক-ঐতিহ্যের বর্ণনা দিয়েছেন । এ বর্ণনায় লোকশিল্পের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধের পরিচয় রয়েছে।
আমাদের নিত্যব্যবহার্য অধিকাংশ জিনিসই এ কুটিরশিল্পের ওপর নির্ভরশীল ।

শিল্পগুণ বিচারে এ ধরনের শিল্পকে লোকশিল্পের মধ্যে গণ্য করা যেতে পারে । পূর্বে আমাদের দেশে যে সমস্ত লোকশিল্পের দ্রব্য তৈরি হতো তার অনেকগুলোই অত্যন্ত উচ্চমানের ছিল। ঢাকাই মসলিন তার অন্যতম। ঢাকাই মসলিন অধুনা বিলুপ্ত হলেও ঢাকাই জামদানি শাড়ি অনেকাংশে সে স্থান অধিকার করেছে।

বর্তমানে জামদানি শাড়ি দেশে-বিদেশে পরিচিত এবং আমাদের গর্বের বস্তু। নকশি কাথা আমাদের একটি গ্রামীণ লোকশিল্প। এ শিল্প আজ বিলুপ্তপ্রায় হলেও এর কিছু কিছু নমুনা পাওয়া যায়। আপন পরিবেশ থেকেই মেয়েরা তাদের মনের মতো করে কীথা সেলাইয়ের অনুপ্রেরণা পেতেন । কাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক-একটি পরিবারের কাহিনী, তাদের পরিবেশ, তাদের জীবনগাঁথা ।

আমাদের দেশের কুমোরপাড়ার শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ছাড়াও পোড়ামাটি দিয়ে নানা প্রকার শৌখিন দ্রব্য তৈরি করে থাকে। নানা প্রকার পুতুল, মূর্তি ও আধুনিক রুচির ফুলদানি, ছাইদানি, চায়ের সেট ইত্যাদি তারা গড়ে থাকে।
খুলনার মাদুর ও সিলেটের শীতলপাটি সকলের কাছে পরিচিত। আমাদের দেশের এই যে লোকশিল্প তা সংরক্ষণের দায়িত আমাদের সকলের । লোকশিল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারি।

1 year ago

আমাদের অর্থনৈতিক সম্পদ

 

বাংলাদেশ, একটি দ্রুত উন্নতি লক্ষ্য নির্ধারণ করা দেশ, যা প্রচুর অর্থনৈতিক সম্পদের বেশিরভাগ সম্পদ নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ মৌলিকভাবে চারটি প্রধান উৎস থেকে আসে: জমি, কাজ, উদ্যোগ, এবং মানুষের কাজের দক্ষতা। এই সম্পদের বিকাশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, আর্থিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের ভূমিকা রয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদের মূল স্তম্ভ হল কৃষি। দেশটি একটি প্রধানত কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির মূল হিসেবে প্রধানত শস্য ও ফসল চাষ প্রসঙ্গে বিকাশ হয়েছে। বাংলাদেশে প্রধানত ধান, পাট, মশুর ডাল, আখ, পটল, পেঁপে, তেল সহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। অত্যন্ত উচ্চ মানের খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনের ফলে এই খাদ্য পণ্য রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক সম্পদের গড়াতে সাহায্য করে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উৎস হল প্রবৃদ্ধি ও শিক্ষাগত উন্নতি। বাংলাদেশে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব কমে আসছে এবং মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি করছে। বিশেষত, প্রযুক্তির আগমন এবং বিনিয়োগে বৃদ্ধি নেওয়া হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক সম্পদের উন্নতির পথে সাহায্য করছে।

অন্যান্য উৎস হিসেবে প্রযুক্তিবিদ্যা এবং সেবা অংশ গুলির অগ্রগতি আছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সম্পদ হল তার মানুষের চাকরিভার্থী শ্রমিকেরা। তাদের দক্ষতা, উদ্যোগ, ও সামর্থ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

যদিও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদ উন্নতির পথে অনেক উত্সাহজনক প্রগতি হয়েছে, তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ র

য়েছে। প্রধানতঃ গরিব মানুষের জন্য আর্থিক সম্পদের অগ্রগতি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনও বেশিরভাগ লোকের মধ্যে বৃদ্ধির অভাব আছে। তাছাড়া, পরিবেশের সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সঠিক প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজন।

পুনর্নির্মাণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পদের বিস্তার ও উন্নতি নিশ্চিত করতে পারে। সঠিক নীতি নির্ধারণ, উদ্যোগের বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত প্রবর্তন এবং শিক্ষাগত উন্নতি এমন পরিবর্তন নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।

শেষ কথায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা দেশটির সমৃদ্ধি ও উন্নতির সাথে অবিভাজ্যভাবে সংযোগিত। একটি দ্রুত বৃদ্ধির উপায় হল সঠিক পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা এবং উদ্যোগের বৃদ্ধি করা। এই প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে, বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক সম্পদ উন্নতির পথে আরও এগিয়ে যেতে পারে এবং তার মানুষের জন্য আরো উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে।

1 month ago